আপনি গণনা কীভাবে করেন? 1, 2, 3, 4, 5, 6,… এভাবেই তো? সিম্ফনি কিন্তু এভাবে গুণে না। তারা গুণে, I, II, III, IV, V, VI, VII, VIII, 9, 10, 15, 20, 25, 12 এবং তারপর 50! মানে Symphony Z সিরিজের কথা বলছিলাম। তো, আমার মনে হয়, এভাবে নাম্বার স্কিপ করাটা Z সিরিজের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। ইভেন, Z30 বললেও পারতো, সরাসরি Z50 তে চলে গেলো।
তো যাই হোক, Symphony আনতে চলেছে তাদের নতুন স্মার্টফোন Symphony Z50। তারা এটাকে বলছে ‘FlagshipForAll’। কিন্তু আমরা জানি, ফ্লাগশিপ স্মার্টফোনগুলো বেশ দামী হয়, তাই সবাই কিনতে পারে না। তাই আমার মনে হয়েছে ‘FlagshipForAll’ কে সহজ বাংলায় গরিবের ফ্লাগশিপ বলা বেশ যুক্তিযুক্ত।
তো, যাইহোক, চলুন গবেষণা করা যাক, সিম্ফনির নতুন এই স্মার্টফোনটি কেমন হলো। আর এটাকে কি আসলেই ফ্লাগশিপ বলা যায়, নাকি এটা গরিবের ফ্লাগশিপ, নাকি শুধুই একটি এন্ট্রি লেভেল বাজেট ফোন?
ফ্লাগশিপ আসলে কী?
প্রচলিতভাবে, একটু দামী ফোন, যেখানে সময়ের সর্বোচ্চ কনফিগারেশন দেওয়া হয়, সেগুলোকে আমরা ফ্লাগশিপ ডিভাইস বলি। তবে এটা কোম্পানিভেদে ভিন্ন হয়। ফ্লাগশিপ বলতে মূলত কোন কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রডাক্টটি বোঝায়, যা কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করে।অ্যাপেলের $699 এ iPhone XR যেমন তাদের কাছে একটি বাজেট ফোন, তেমনি Symphony কোম্পানির জন্য নয় থেকে দশ হাজার টাকার ফোনও ফ্লাগশিপ হতে পারে। তো, এই বিবেচনায় আসলে, Symphony Z50 অবশ্যই তাদের ফ্লাগশিপ ডিভাইস।
Symphony Z50
সিম্ফনি তাদের ফেসবুক পেজে কয়েকদিন ধরে এটার বেশ প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা এটাকে যেভাবে ফ্লাগশিপ হিসেবে প্রচার করছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই এটার থেকে আশা অনেকটা বেশি ছিলো। হ্যাঁ, এটা সিম্ফনি ব্র্যান্ডের এখন পর্যন্ত আনা সেরা একটি ফোন। তবে, আমাকে সত্যি বলতে কিছুটা আপসেট করেছে।ডিজাইন ও বিল্ড
ফোনটির ডিজাইনে আমি বেশি হতাশ… ফোনটির ডিজাইনে একটু নতুনত্ব, একটু প্রিমিয়াম ভাব আশা করেছিলাম। কিন্তু না। ফোনটি দেখে বেশ নিশ্চিতভাবে বোঝা যাচ্ছে, এটা প্লাস্টিক বিল্ড। ফোনটির তিনটি কালার আছে। Carribean Blue কালারটি সম্ভবত দারাজে এবং শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে। Aqua Blue এবং Blue-Purple কালারেরও উল্লেখ আছে দারাজে, তবে সেগুলো স্টকে দেখাচ্ছে না। হয়ত পরে আসবে। বাট, আমি যেটা বুঝলাম না, সিম্ফনির সিইও কি ব্লু খুব বেশি পছন্দ করে?ডিসপ্লে
মন ভালো হয়ে যায় সামনের দিকে তাকালে। সামনে থাকছে একটি V শেপের নচওয়ালা ডিসপ্লে। নচ, চিন ও বেজেল বেশ মিনিমালিস্টিক। ডিসপ্লে হিসেবে থাকছে 6.5″ এর একটি বিশাল ডিসপ্লে। তবে মন আর ভালো থাকে না, যখন জানা যায়, এত বিশাল ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন HD+ (এইটা কোন কথা?)। আর হ্যাঁ, এটি একটি 2.5D IPS প্যানেল, যেখানে Incell প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারে শার্পনেস কিছুটা ভালো হওয়া সহ আরো কিছু সুবিধা রয়েছে। বাট, আফটার অল, এটা একটা HD+ রেজ্যুলেশনের IPS প্যানেল।পারফরমেন্স ও স্টোরেজ
চিপসেট তো বুঝতেই পারছেন, এটা ফ্লাগশিপ ডিভাইস, অবশ্যই এখানে আছে SD865! মজা করলাম, বুঝতেই পারছেন, আদতে এটা গরিবের ফ্লাগশিপ। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে MediaTek Helio P25 চিপসেট, সাথে GPU Mali T-880 MP2। এটি 16nm আর্কিটেকচারের একটি 2.6GHz এর OctaCore প্রসেসর, যার সবগুলো কোর ARM Cortex A-53।তো এই চিপসেটটি কেমন? একদম খারাপ না, তবে P22 থেকে ওভারঅল কিছুটা পিছিয়ে থাকবে, যদিও কিছু দিকে এগিয়ে আছে। ফোনটার দাম হিসেবে আমার মেনে নিতে আপত্তি নেই। বিশেষ করে, ইতোপূর্বে সিম্ফনি তাদের কোন ফোনে 1.6 GHz OctaCore Unisoc SC9863a এর চেয়ে ভালো চিপসেট ব্যবহার করেছে বলে আমার জানা নেই। 1.3 GHz Quad Core চিপসেট দিয়ে বিখ্যাত একটি কোম্পানির কাছে এই চিপসেট পাওয়া সৌভাগ্যের বলব।
তবে এটা অনেক পুরনো চিপসেট, প্রায় বছর তিনেক আগের। তারপরেও, দামের দিকে তাকিয়ে এখানে অভিযোগ করছি না।
র্যাম থাকছে LPDDR4x সিরিজের 4GB র্যাম। ইন্টারনাল স্টোরেজ 64GB। সব মিলিয়ে ডে টু ডে ইউসেজে হার্ডকোর গেমাররা বাদে বাকিরা সন্তোষজনক পারফরমেন্সের আশা করতে পারেন।
ক্যামেরা
ক্যামেরার কথা যদি বলি, সিম্ফনির আরও অনেক সেটের মত এখানেও প্রাইমারি ক্যামেরা 13MP ও ফ্রন্ট ক্যামেরা 8MP। রেয়ারে আরো দুটি ক্যামেরা থাকছে, একটি 2MP টেলিফটো ও একটি 2MP ডেপথ সেন্সিং ক্যামেরা। টেকনিক্যাল ওমর চ্যানেলে ক্যামেরা স্যাম্পল যা দেখলাম, ভয়াবহ। তবে ক্যামেরা এবং ক্যামেরা অ্যাপের UI আপডেট করা হয়েছে বলেও একটি কমেন্ট দেখলাম। রিয়েল লাইফ এক্সপ্রেরিয়েন্স যেহেতু নেই, এর বেশি বলতে পারছি না।সিক্যুরিটি
সিক্যুরিটি সেকশনে রেয়ার মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর পাওয়া যাবে। সফটওয়্যার বেজড ফেস আনলকও সম্ভবত, যদিও, এটা খুব কাজের মনে করি না।ব্যাটারি
ব্যাটারির কথা কি ভুলে যাচ্ছিলাম? 4000 mAh এর ব্যাটারি থাকছে এখানে, যেটা বর্তমান সময়ে স্বাভাবিকভাবেই থাকার কথা। আরেকটু বেশি থাকলে কি আরেকটু ভালো হত? হ্যাঁ, তা তো হওয়ারই কথা!সেন্সর
দারাজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, Light, Gravity ও Proximity সেন্সর থাকছে এতে। মানে কী? এরকম একটা ফোনে Compass ও Gyroscope সেন্সর নাই? দুঃখজনক।দাম
এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, ফোনটির দাম। এর দাম ধরা হয়েছে ১০,৯৯০ টাকা। বাজারে এই দামে ৪-৬৪ ফোন কিন্তু খুব বেশি সম্ভবত নেই। সাথে আরো থাকছে একটা বিশাল ডিসপ্লে এবং ন্যারো চিন ও কিউট নচ। সব মিলিয়ে ওকে, বাট পসিবলি নট দা বেস্ট ইন বাজেট। Infinix Hot 8 সেম দামে বেটার কিছু অফার করছে, সে হিসেবে দাম কমানো প্রয়োজন ছিলো।অভিমত
সিম্ফনির জন্য এটা অবশ্যই ফ্লাগশিপ, যদিও আদতে এটাকে একটা ভালোমানের এন্ট্রি লেভেল বাজেট ফোন বলা যায়। এটার দাম এখনো জানি না। যদি ১০,৯৯০ এর মধ্যে হয়, তাহলে এটাই সম্ভবত বেস্ট ইন বাজেট। তবে, দাম আরো বেশিও হতে পারে। কারণ বড় ডিসপ্লে, 4-64 র্যাম-রম, 2.6 GHz OctaCore প্রসেসর এখানে আছে।তবে প্লাস্টিক বিল্ড, HD+ রেজ্যুলেশন, সেন্সরের অভাব ফোনটির ভ্যালু কমিয়ে দিচ্ছে, নয় কী? আবার ক্যামেরা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে (ক্যামেরা সেকশনে দেখুন)।
যারা এরকম বাজেটে ৪-৬৪ ডিভাইস খুঁজছেন, তাদের অবশ্যই পছন্দ তালিকায় রাখার মত। আবার ভিডিও এক্সপ্রেরিয়েন্স এর বড় ডিসপ্লে ও Incell প্রযুক্তি মিলিয়ে বেশ চমৎকার হবে আশা করা যায়। অন্যদিকে, প্লাস্টিক বডি, সেন্সরের কমতি এগুলো ফোনটিকে একটু পিছিয়ে দিচ্ছে। আবার বড় ডিসপ্লে অনেকে পছন্দ করেন না।
এই দামে Infinix Hot 8 5000 mAh ব্যাটারী, Helio P22 চিপসেট, Compass সেন্সর অতিরিক্ত অফার করছে। ডিসপ্লে, র্যাম-রম সহ বাকিসব স্পেকের দিক থেকে সেম। আরেকটু কম দামে Redmi 8A, Walton Primo RX7 Mini, আরেকটু বেশি দামে Realme 5i ফোনগুলোও কিন্তু বেশ ভালো। আপনার ঠিক কী প্রয়োজন তা বুঝেই কিন্তু আপনাকে নিজের ডিভাইসটি বেছে নিতে হবে।
সব মিলিয়ে আমার ফোনটি খুব খারাপ লাগেনি। তবে অবশ্যই উন্নতির অনেক জায়গা থেকে গিয়েছে।
0 মন্তব্য(গুলি):