Tuesday, April 7, 2020

প্রিমো আর এক্স৭ মিনি (Primo RX7 Mini) : কি আসলেই কিলার স্মার্টফোন?

২০১৯ সালের নভেম্বর মাস থেকে পুরো দেশের বাজেট স্মার্টফোন বাজারে যে সত্ত্বাটি এক শক্ত অবস্থান তৈরি করে তার নাম ওয়ালটন প্রিমো আরএক্স৭ মিনি। সে সময় প্রথম এক মাস ৭,৭৯৯ টাকায় ফ্ল্যাশ সেলে বিক্রি হলেও পরবর্তীতে স্মার্টফোনটির রেগুলার দাম হয় ৮,৭৯৯ টাকা। পরবর্তীতে দাম হয় ৮,৯৯৯ টাকা এবং বর্তমানে করোনা প্রভাবে এর দাম গিয়ে ঠেকেছে ৯,৪৯৯ টাকায়! অন্য সবার মত আমারও স্মার্টফোনটি কেনার জন্য একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল। ওয়ালটনের এই প্রথম ফোন যা কেনার প্রতি আমার তীব্র ইচ্ছা জন্মায়, যদিও আমাকে আগেও ওয়ালটনের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হয়েছে, তবে তা অনেকটা ঠ্যালায় পরে!


যাই হোক, আমি স্মার্টফোনটি কিনলাম এমন এক ক্রান্তিপূর্ণ সময়ে যখন চীনে পুরোপুরিভাবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে। আমি প্রিমো আরএক্স৭ মিনি কিনেছি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি, আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সময় করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সকল ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতির দাম হুহু করে সবজায়গায় বেড়ে যাচ্ছিল। সেই দাম বেড়ে যাওয়ার ছোঁয়া লাগে এই আর এক্স ৭ মিনি'তেও। আমাকে ৫০০ টাকা বেশি ঢেলে ৯,৪৯৯ টাকা দিয়ে এই ফোন ঘরে তুলতে হয়। যখন কোন কিছু কেনার ইচ্ছা সত্যি সত্যি লাগে, তখন সেই বেড়া আটকানো যায় না।

যাই হোক, আমি ৮,৯৯৯ টাকার সাপেক্ষেই স্মার্টফোনটিকে তুলনা করব, কেননা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওয়ালটন আবার এই দামটি ৯৪৯৯ থেকে ৮৯৯৯ করবে আমার বিশ্বাস, যদি স্টক থাকে! আসল কথায় আসি, স্মার্টফোনটি প্রথমদিন হাতে নিয়ে কোনভাবেই একেক সস্তা কোন স্মার্টফোন মনে হচ্ছিল না। এমনকি মিডরেঞ্জের বিভিন্ন ভালোমানের স্মার্টফোনের ডিজাইনের সাথেও এই আরএক্স৭ মিনি  এর ডিজাইন এর তুলনা করা যায়, খুব দারুন ভাবে। যেখানে ২৪ হাজার টাকার স্যমসাং এম৪০ স্মার্টফোনও প্লাস্টিক বিল্ডে তৈরি, সেখানে এই ৮৯৯৯ টাকার প্রিমো আরএক্স৭ মিনিতে সামনে পেছনে পাবেন গরিলা গ্লাস। গরিলা গ্লাস শুনে এর অপর হাতুড়ি চালানোর স্বপ্ন দেখবেননা; গরিলা গ্লাস স্ক্রাচ প্রুফ, ভাঙাভাঙ্গি প্রুফ না। তাই হাত থেকে পরলে খবর হয়ে যাবে।
ছবিতে দাগ নিজ দায়িত্বে ইগ্নোর করুন


তো যদি আসে ভাঙ্গাভাঙ্গির কথায়, এই স্মার্টফোনটি হাত থেকে পরে গেলে ক্ষতি হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকেই স্বাভাবিক, কেননা এটি গ্লাস বডি। তবে তাদের জন্য আশার আলো প্রিমো আরএক্স৭ মিনি নকিয়া ৫.১ প্লাস এর রিব্রান্ডিং। নকিয়া ৫.১ প্লাসে ছিল এন্ড্রয়েড ওয়ান, আর এতে এন্ড্রয়েড ওয়ান এর বদলে, ওয়ালটনের ইচ্ছায় আপডেট নির্ভরশীল স্টক এন্ড্রয়েড ৯ পাই এডিশন। তাই বডিতে কোনরকম ক্ষতি হলে এর গ্লাস বা অন্যযেকোনো পার্টস মার্কেটে এভেইলেবল পাবেন।  ধরুন আপনার পেছনের গ্লাস প্যানেল ভেঙ্গে গেলে, আপনি নকিয়া ৫.১ এর গ্লাস প্যানেল মার্কেট থেকে খুঁজে নিয়ে লাগাতে পারবেন। যদিও ওয়ালটন সার্ভিস সেন্টারে গেলে যে পাবেননা এমনটা না। যারা সুন্দর সুন্দর স্মার্টফোনগুলোকে মোটা মোটা কভার লাগিয়ে অসুন্দর বানাতে এক্সপার্ট; তাদের জন্যও এটি সুখবর। নকিয়া ৫.১ প্লাসের শত শত ডিজাইনের বিভিন্ন কভার মার্কেটে অলরেডি পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। তাছাড়া বক্সে একটি ফ্রি সিলিকন কভার তো পাচ্ছেনই।

সফটওয়্যারের দিকে আসি, আগেই বলেছি স্মার্টফোনটিতে এন্ড্রয়েড স্টক ৯ পাই ব্যবহার করা হয়েছে। পরীক্ষা করার জন্য পাব্জি এর মত গেমস খেলেছি, তাতে হালকা ল্যাগট্যাগ ছাড়া বেশি কিছু পাইনি, যা সহনীয়। যেখানে স্মার্টফোনটির র‍্যাম ৩ জিবি এবং প্রসেসর হেলিও পি৬০ এই স্মার্টফোনে যেকোনো অ্যাপলিকেশনে স্পিড ভালো পাওয়া যায় ঠিক আছে, তবে র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট খুবই খারাপ।
মাল্টি টাস্কিং সেই জন্য এই স্মার্টফোনে বর্তমানে প্রায় অপ্রতুল হয়ে পড়েছে।

 আমি জানি এটা হার্ডওয়্যারের কোন ইস্যু না এটা সফটওয়্যার জনিত ইস্যু। ওয়ালটন এই সমস্যা নিরোধনে জানুয়ারি থেকে একটি সফটওয়্যার আপডেট সব ফোনে দিলেও সেই আপডেটে কিছুদিন র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট ভালো থাকেলেও তারপর থেকে যে লাউ সেই কদু অবস্থা। আমার এই স্মার্টফোনের সবচেয়ে বড় সমস্যা লেগেছে এই অভ্যন্তরীণ সফটওয়্যারের দিকে। যেমন আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, কোন কল আসলে আপনি রিসিভ করলেও, পরবর্তীতে সেই কলটি আপনাকে নোটিফিকেশন বারে মিসড কল দেখাবে। 

তাছাড়া ক্যামেরা, ব্যাটারি ব্যাকআপের দিক দিয়ে স্মার্টফোনটি মোটামোটি ভালো। ক্যামেরা ইউআইএ আরো এক্সট্রা কিছু ফিচার দেয়া যেতো, তবে যা আছে তা যথেষ্ট।

SHARE THIS

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 মন্তব্য(গুলি):